Sunday, March 15, 2009

অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের ইতিহাস

অনেকেই হয়তো অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কথা শুনে থাকবেন। পাথরযুগীয় সভ্যতার জন্য পৃথিবীজোড়া যাদের পরিচিতি আছে। নৃতত্ববিদ্যায় অস্ট্রেলিয় আদিবাসীরা তাই একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই আদিবাসীরা নিজেদেরকে “কুরি” বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। এরা স্বাস্থ্যবান এবং বাদামী-কালো চামড়ার অধিকারী। গড় উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চির মতন (এক দশমিক ছয় আট মিটার) হয়ে থাকে। এদের চোখের রঙ সাধারণত গাঢ় বাদামি, চুলের রঙও তাই; তবে অনেকের চুলের রঙ লালচে অথবা সাদাটে-লালচে হতেও পারে। এদের ভ্রুজোড়া মোটা, চোয়াল বড় আর চুলগুলো কোকড়া হয়ে থাকে।

নৃবিজ্ঞানীদের মতে অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের জাতিগতভাবে আলাদা করা বেশ দুষ্কর। কিছু নৃবিজ্ঞানীরা এদেরকে ‘অস্ট্রালয়েড জাতি’ বলে থাকেন। এদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে এশিয়ান এবং পলিনেশিয়ানদের মিল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় যে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এসে এসব আদিবাসীরা বসতি স্থাপন করে।

ঐতিহ্যগতভাবে অস্ট্রেলিয় আদিবাসীরা শিকারী। তাদের প্রয়োজনীয় খাবার তারা শিকারের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো নতুবা অন্য কোনও উৎস থেকে আহরণ করতো। চাষাবাদে এদের কোনই অভিজ্ঞতা ছিলনা। পশু শিকারের কাজে এরা নানারকম অস্ত্র ব্যবহার করত যাদের মধ্যে বর্শা এবং বুমেরাং-এর নাম উল্লেখযোগ্য। গৃহপালিত পশু হিসেবে এদেরকে শুধুমাত্র ‘ডিংগো’ পালন করতে দেখা যায়। ‘ডিংগো’ হচ্ছে বিশেষ প্রজাতির কুকুর যা শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়াতেই পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের মধ্যে প্রায় পাঁচশত বিভিন্ন উপজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের প্রত্যেকের ভাষায় ভিন্নতা আছে। এসব আদিবাসীরা শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের অলংকার পরিধান করে থাকত। তবে এসব অলংকার তৈরিতে তারা কোন ধরনের ধাতু ব্যবহার করতো সেই উত্তর আজো মেলেনি নৃবিজ্ঞানীদের কাছে। কিছু কিছু উপজাতি শীত নিবারনের জন্য ক্যাঙ্গারুর চামড়া ব্যবহার করত। অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের বিবাহপ্রথা, সামাজিকপ্রথা, ধর্মানুভূতি এবং ধর্মীয় আচার-আচরণ -এগুলো বেশ উন্নতমানের ছিল।

১৭৮৮ সালে ইউরোপিয়ানরা এসে অস্ট্রেলিয়ায় বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। সে সময় থেকে শুরু করে ১৯০০ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের সংখ্যা ৫০০,০০০ থেকে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়ে মাত্র ৫০,০০০ -এ এসে দাঁড়ায়। যার পেছনে প্রধানভাবে দায়ী করা হয় ইউরোপ থেকে নিয়ে আসা নানান অসুখ-বিসুখকে। এসব অসুখ প্রতিরোধের কোনও ব্যবস্থাই আদিবাসীদের কাছে ছিলনা। এছাড়াও ইউরোপিয়ানরা অনেক আদিবাসীদের হত্যা করে যেটিকে এদের সংখ্যা কমে যাবার আরেকটি কারণ হিসেবে দায়ী করা যায়। এখনো অনেক আদিবাসী তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ আদিবাসীরাই শহুরে এলাকায় এসে বসত গড়েছে, অথবা কৃষিকাজে মনোযোগী হয়েছে।

অনেক বছর ধরে অস্ট্রেলিয় সরকার আদিবাসীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। ১৯৩০ সালে আদিবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে সকল পর্যায়ে তাদের সমঅধিকারের দাবিতে। প্রায় দশ বছর পর আদিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সমঅধিকার অর্জন করতে সমর্থ হয়। ১৯৬৭ সালে আদিবাসীরা তাদের ভোটাধিকার অর্জন করে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার কোনও নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার ছিলনা। অস্ট্রেলিয়ার অনেক এলাকায় ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু করে আজো আদিবাসীরা সরকারের কাছে তাদের পৈত্রিক জায়গাজমি ফিরিয়ে দেবার আবেদন করে আসছে। কিছু কিছু জায়গাজমি তাদেরকে ফেরত দেওয়া হলেও অধিকাংশ জমিই সরকারের দখলে রয়ে গেছে। যেগুলোর মালিক চার লক্ষ দশ হাজারের মতন অস্ট্রেলিয় আদিবাসীরা।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

---------------------------------

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন, ২০০৯।

2 comments:

shree said...

darun lekhata hoyechhe.ei khabor gulo to jani..i na
1967 e votadhikar ..ki kando baloto bhai.ei ajana tathyogulo theke bojha jaye sotyi i kibhabe kato kato jati ,upojati hariye gechhe.
amar prothom diker lekha ye ekta '71 er kobita achhe jeta sotyo ghatona.tomar bhalo lagbey .ami Islam niye likhini kintu Quran er ayat ebong sarbopari Allah r ashesh karuna r opor kobita likhechhi.hmmm tomar bhalo lagteo parey.ekdam purono lekha ta diye shuru koro.kobitar naam tor...i janyo.

Anonymous said...

test