Sunday, November 30, 2008

কৃত্রিম মিষ্টিকারকঃ চিনির বিকল্প হিসেবে কতটুকু নিরাপদ ?

চিনি আমাদের সকলের নিত্যদিনের আহারের অংশ। তবে খুব বেশি পরিমাণ চিনি গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। খাদ্যাভাসে অধিক পরিমাণে চিনি থাকলে তা রক্তে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। যা শেষ পর্যন্ত ওজন বাড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনেকেই আজকাল কৃত্রিম মিষ্টিকারকের দ্বারগ্রস্থ হচ্ছেন। যেগুলোতে কম ক্যালোরি থাকার কারনে ওজন বেড়ে যাবার ভয় নেই, অন্যদিকে খাবারের মিষ্টতা অটুট রাখতেও এদের জুড়ি মেলা ভার।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে কৃত্রিম মিষ্টিকারকের পেছনের রহস্য কি এবং এগুলো কাজ করে কিভাবে? কৃত্রিম মিষ্টিকারকগুলোর মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক অথবা ভেষজ উপাদান থাকে যারা খাদ্যের মিষ্টতা চিনির চেয়ে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে রক্তে ক্যালোরির মান একদম নিয়ন্ত্রণে রেখে। তাই দৈহিক ওজন কমিয়ে আনতে চাইলে অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে এগুলোর বিকল্প পাওয়া দুষ্কর।

ডায়াবেটিসে যারা ভুগে থাকেন অনেকেই এসব কৃত্রিম মিষ্টিকারক ব্যবহার করে আসছেন তাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে। কারন ঐ একটাই, কারন এগুলো রক্তে ক্যালোরির পরিমাণ না বাড়িয়ে খাদ্যে মিষ্টতা আনার ক্ষমতা রাখে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, কিছু কিছু কৃত্রিম মিষ্টিকারকযুক্ত খাদ্য দ্রব্যাদি তার রক্তে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতেও পারে। উদাহরণ হিসেবে চিনিমুক্ত দই অথবা চিনিমুক্ত কুকিজ অথবা চকোলেটের কথা বলা যেতে পারে। এসব খাদ্যে বেশিরভাগ সময় যেসব কৃত্রিম মিষ্টিকারক ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে সরবিটল অথবা ম্যানিটল থাকে, এবং এসব উপাদান রক্তে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতেও পারে। আবার কিছু চিনিমুক্ত খাদ্যের মধ্যে আটা/ময়দা থাকতে পারে যা রক্তে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে সহজেই।

বিজ্ঞনীরা অনেক গবেষণা করেছেন এসব কৃত্রিম মিষ্টিকারকদের নিয়ে। এবং উনারা এগুলোর দৈনিক গ্রহণের নিরাপদ মাত্রা স্থির করে দিয়েছেন। যেগুলোতে এস্পারটাম(Aspartame) থাকে সেগুলো রান্নার কাজে ব্যবহার করা একদম নিরাপদ নয়। এবং আপনার ওজনানুযায়ী কেজিপ্রতি দৈনিক ৫০ মিলিগ্রাম গ্রহণ করা যেতে পারে। ধরুন আপনার দৈহিক ওজন যদি ৬৫ কেজি হয় তবে আপনি দৈনিক গ্রহণ করতে পারবেন (৬৫ x ৫০) মিলিগ্রাম অর্থাৎ ৩ দশমিক ২৫ গ্রাম। স্যাকারিন(Saccharin) জাতীয় মিষ্টিকারকগুলো রান্নার জন্য উপযোগী কিন্তু ওজনানুযায়ী কেজিপ্রতি ৫ মিলিগ্রামের উপরে গ্রহণ করা একদম উচিত হবেনা। এক্সালফেম(Acesulfame K) জাতীয় মিষ্টিকারকগুলোর ওজনানুযায়ী দৈনিক গ্রহণযোগ্য মাত্রা হল ১৫ মিলিগ্রাম কেজিপ্রতি। সুক্রালোজ(Sucralose) জাতীয়গুলো রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫ মিলিগ্রাম কেজিপ্রতি।

সংবাদপত্র এবং ইন্টারনেটে কৃত্রিম মিষ্টিকারকগুলো কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে নানান সময়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগের ভাষ্য ছিল কৃত্রিম মিষ্টিকারকগুলো স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে যার মধ্যে ক্যান্সারের নাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আমেরিকার ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে এবং সাধারণ মানুষ নির্দিধায় ব্যবহার করতে পারে বলেছে। তবে যাদের বিরল পিকেইউ(hereditary disease phenylkeronuria)অসুখ রয়েছে তাদের এস্পারটাম(Aspartame) জাতীয় মিষ্টিকারকগুলোকে ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

খাদ্যাভাস থেকে শুধুমাত্র চিনির অপসারণ ঘটালেই যে দেহে ক্যালোরির মান কমে যাবে আমাদের সেই ভুল ধারনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেইসাথে সবাইকে সচেতনভাবে বিকল্প চিনি অথবা কৃত্রিম মিষ্টিকারকের ব্যবহার করা উচিত।

[তথ্যসূত্রঃ মায়োক্লিনিক ডট কম]

--------------------------------

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন ২০০৮।

Monday, November 10, 2008

গদ্য লিখতে পারিনা !

কি লিখতে যাচ্ছি নিজেই জানিনে, তাই পাঠকদের সতর্ক করে দিতে চাই যে এই লেখা পড়বার পর উনাদের মনে হতে পারে অযথা নিজের সময় নষ্ট করলাম। অতএব সম্মানিত পাঠকদের যদি কিছু সময় হাতে থাকে নষ্ট করবার মতন তাহলে লেখার বাকিটুকু পড়তে পারেন।

লিখতে গিয়ে স্পর্শ ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেল। সামহোয়ারিনে উনি (অ)গাণিতিক বলেই অধিক পরিচিত। উনার আব্‌জাব লেখাগুলোর আমি বেশ ভক্ত ছিলাম। ভাইয়ার সাথে আমার ব্যক্তিগত ভাবেও তেমন পরিচয় নেই তাই জানিওনা কেন আজকাল লিখছেন না ভাইয়া। তবে নতুন লেখা পেলে খুব ভাল লাগত উনার থেকে। যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসি এবার, নুশেরা আপু মাঝেসাঝে আমাকে প্রশ্ন করে থাকেন যে তুমি গদ্য লেখনা কেন? উনার সাথে তাল মিলিয়ে হয়তো আরো কয়েকজন আমাকে একই প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু জবাব যে আমার জানা নেই তা বলাই বাহুল্য। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে কোথায় থেকে কোথায় যেন হারিয়ে যাই। তবু এই প্রশ্নের সদুত্তর হয়তো এখনো যোগাড় হয়নি। তবুও ঠেস দিয়ে দাঁড় করালাম এই প্রশ্নের অগোছালো কিছু উত্তর, মনের ভেতরেই।

আমি কিছু লিখতে বসলে এক প্রসঙ্গে থাকতে পারিনা। হঠাৎ কিভাবে যেন প্রসঙ্গ বদলে যায় তার উপলব্ধিও হয়না। যেমন লিখতে বসার পরমুহূর্তে ভাবছিলাম অকবিতা টাইপের লেখা লিখিনা অনেকদিন তাই একটা চেষ্টা করে দেখা যাক। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবেই চিন্তাটা বাতিল করে দিলাম। ভাবলাম হাবিজাবি মনে যা চায় তাই লিখি। সেখান থেকে স্পর্শ ভাইয়ার প্রসঙ্গ এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে হচ্ছে প্রসঙ্গ থেকে আবার দূরে চলে যাচ্ছি। আচ্ছা, যা বলছিলাম আরকি। কোন প্রসঙ্গে লিখব তাই ভেবে পাইনে লিখতে বসে। গদ্য বের হবে কিভাবে বলুন?

এবার অন্যদিকগুলোতে আলোকপাত করা যাক, আমার বাংলা বানান মনেহয় দিনে দিনে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। আর ভুল বানানে বাংলা লেখা খুবই দৃষ্টিকটু দেখায়। আমার লেখার মাঝে কেউ কোনও ভুল বানান দেখলে অবশ্যই জানিয়ে দেবেন দয়া করে। অত্যন্ত বাধিত হব। গদ্য ধরনের লেখাগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বাংলা শব্দের ভাণ্ডার থাকা খুব জরুরি বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। যা আমার কাছে নেই। তাই তেমন গদ্য লেখার যোগ্যতা কোথায় ? এর সাথে পর্যাপ্ত বাংলা সাহিত্য চর্চার অভাব, ব্যাকরণগত দুর্বলতা, জীবন-দর্শন সম্পর্কে ধারনার অপ্রতুলতা, ব্যক্তিগত দ্বিধা ইত্যাদি তো আছেই।

আরেকটা সমস্যা হয় আমার লিখতে গিয়ে, সেটা হচ্ছে লেখার শেষ পর্যায়ে এসে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনে কিভাবে শেষ করা যায় লেখাটা। এ প্রসঙ্গে পূর্ব-অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল। একবার এক ই-ম্যাগাজিনের সম্পাদক ভাইয়ার চাপাচাপির কারনে একটা হাবিজাবি লেখা দিতে হয়েছিল। প্রবন্ধ টাইপের লেখা ছিল সেটা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে ছিল যতদূর মনে পড়ছে। ওটা লিখতে গিয়ে কিছুতেই আমি উপসংহার অংশটা যুতসইভাবে লিখতে পারছিলাম না। যাই লিখি মনঃপুত হচ্ছিল না নিজের কাছেই। তারপর সম্পাদক ভাইয়াকে গিয়ে ধরি। উনি প্রথমে একচোট হেসে নিলেন তবুও উনি দিকনির্দেশনা না দিলে হয়তো ঐ লেখাটা শেষ করাই যেতনা। লিখতে লিখতে আবার প্রসঙ্গ থেকে পিছলে যাচ্ছি মনেহয়। পাঠকরা সেটা বেশ বুঝতে পারছেন এতক্ষণে। রাজনৈতিক বক্তাদের বক্তৃতার মতন লেখাটি দীর্ঘায়িত করে পাঠকদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেবার উদ্দেশ্য আমার একদমই নেই। শেষ করার আগে আরেকবার তাই বলব যে গদ্য লেখা বোধকরি আমাকে দিয়ে হবেনা।

---------------------------------
প্রথম প্রকাশঃ সামহোয়ারিন ব্লগ, ২০০৮।