Thursday, August 6, 2009

ভাইকিংদের কথকতা - প্রথম পর্ব

কোথা থেকে ভাইকিংরা এসেছিল ?
ভাইকিংরা এসেছিল তিনটি স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ থেকে। সেগুলো হচ্ছে- ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং সুইডেন। ‘ভাইকিং’ শব্দটি এসেছে পুরাতন নরস ভাষা থেকে। ইউরোপের ইতিহাসে ভাইকিংদের খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ থেকে ১১০০ শতাব্দী পর্যন্ত। এই সময়কালের মধ্যে ভাইকিংরা নিজেদের দেশ ছেড়ে অন্যান্য দেশে পাড়ি জমায় যেমন ব্রিটেন অথবা আয়ারল্যান্ড। কিছু ভাইকিংদের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমানোর মূল উদ্দেশ্যই ছিল মারামারি এবং লুটতরাজ চালানো। আবার কিছু কিছু ভাইকিং অন্যান্য দেশে পাড়ি জমিয়ে সেখানে কৃষক, বুনন কারিগর অথবা ব্যবসায়ী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করে।

বৃটেনে ভাইকিংদের আগমণ
বৃটেনের দক্ষিণাঞ্চল, যাকে আমরা আধুনিককালে ইংল্যান্ড হিসেবে চিনি; এংলো-স্যাক্সনরা সেখানে প্রথমে বসতি স্থাপন করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৮৭ শতাব্দীতে তিনটি ভাইকিংদের জাহাজ ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে নোঙ্গর করে। এসব জাহাজকে ‘লংশিপ’ বলা হতো। এরপর ভাইকিংদের সাথে যুদ্ধ হয় এংলো-স্যাক্সনদের। পরবর্তীকালে ভাইকিংদের সাথে এংলো-স্যাক্সনদের অসংখ্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এটা শুধু সূত্রপাত ছিল। ভাইকিং হামলাকারীদের ইংরেজরা ‘ডেনস’ বলে ডাকত। তারা ভেবেছিল সব ভাইকিংরাই ডেনমার্ক থেকে আগত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভাইকিংরা শুধু ডেনমার্ক থেকেই আসেনি, নরওয়ে এবং সুইডেন থেকেও এসেছিল। নরওয়ে থেকে আগত ভাইকিংদের বলা হতো ‘নরস’; তারা গিয়ে স্কটল্যান্ডে পাড়ি জমায় এবং সেদেশের উত্তরাংশে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। ভাইকিংরা ওয়েলসেও হামলা চালিয়েছিল কিন্তু তেমন বেশি সংখ্যক ভাইকিংরা সেখানে বসতি স্থাপন করেনি। বৃটেনে প্রচুর উর্বর ভূমিখণ্ড ছিল কৃষিকাজ করার জন্য। এসব ভূমিখণ্ড ভাইকিংদের আগ্রহী করে তোলে বৃটেনে পাকাপাকিভাবে পরিবার নিয়ে থেকে যাবার জন্য। ডেনমার্ক, নরওয়েতে কৃষিকাজের উপযোগি জমি তেমন ছিলনা সেকালে। থেকে যাওয়া ভাইকিংরা জমির উর্বরতা ব্যবহার করে কৃষিকাজ শুরু করে এসব জমিতে। স্কটল্যান্ডের উত্তরাংশে এবং ইংল্যান্ডের দক্ষিণাংশে ভাইকিংদের আধিপত্য দেখা যায়। আয়ারল্যান্ডের অতি গুরুত্বপূর্ণ শহর ‘ডাবলিন’ ভাইকিংরাই প্রতিষ্ঠা করে।

ভাইকিংদের পারিবারিক জীবন
বেশিরভাগ ভাইকিং পুরুষেরা অত্যন্ত কর্মঠ ছিলেন। যেকোন ধরনের কাজে তাদের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। কিছু ভাইকিংরা অন্যদের চাইতে মাটির পাত্র তৈরির কাজে, নৌকা বানানোর কাজে অথবা চামড়ার কাজে বেশি পারদর্শী ছিল। প্রয়োজনের সময় প্রায় সব ভাইকিং পুরুষদেরকেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হতো। ভাইকিং নারীরা রুটি বানানোর কাজে দক্ষ ছিলেন। এছাড়াও তারা ভেড়ার লোম থেকে পোষাক বানানোর কায়দা-কানুন জানতেন। বাসার বাচ্চাদের দেখাশুনা করতেন নারীরাই। ঘরের যাবতীয় রান্নার কাজ এবং পোষাক বানাবার কাজ নারীরাই সম্পাদন করতেন। বেশিরভাব পরিবারে দিনে দুইবেলা খাবার প্রচলন ছিল। নারীরা পুরুষদের মাঝেসাঝে কৃষিকাজেও সাহায্য করে থাকতেন। গরুর দুধ দোয়ানোর কাজ মেয়েদের করতে হতো এবং সেগুলো থেকে পনির বানানোর কাজটাও।

ভাইকিং পরিবারে কোনও ছেলে শিশুর জন্ম হলে তার শেষনামে বাবার নাম জুড়ে দেওয়া হতো। আর মেয়ে শিশুর জন্ম হলে কখনো কখনো হুবহু মায়ের নাম অথবা দাদীর নাম রেখে দেওয়া হতো। ভাইকিং শিশুদের স্কুলে যাবার প্রথা ছিলনা। তারা সাধারণত বাসায় অথবা কর্মক্ষেত্রে তাদের পিতা-মাতাকে সাহায্য করতো। বাসাতেই ভাইকিং শিশুদের ভাইকিংদের ইতিহাস, ধর্ম, আইন এবং ভাইকিংদের নিয়ম-কানুন ইত্যাদি মুখে মুখে শিক্ষা দেওয়া হতো। ভাইকিং শিশুদের ১৫/১৬ বছর হয়ে গেলে তাদেরকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করা হতো। আর মেয়েদের জন্য তাদের বাবা স্বামী নির্ধারণ করতো।

(চলবে)

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

---------------------------------------------
প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন, ২০০৯ ।

No comments: